অবশেষে ভারতীয় বন বিভাগের সহায়তায় নিজ দেশে ফিরেছে ভারতীয় হাতি দুটি

পঞ্চগড় প্রতিনিধি।।

গত তিন দিন ধরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি সীমান্ত এলাকা দাপিয়ে বেড়ানোর পর অবশেষে ভারতীয় বন বিভাগের সহায়তায় নিজ দেশে ফিরেছে ভারতীয় হাতি দুটি।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের উত্তর কাশিমগঞ্জ ও ভারতের ফাঁসিদেওয়া সীমান্ত দিয়ে হাতি দুটিকে ভারতে নেয়া হয়।

তিন দিনের মাথায় উভয় দেশের প্রশাসন, বন বিভাগ, পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্ঠায় ভারতীয় হাতির সাহায্যে হাতি দুটিকে ঘুমের ইনজেকশনে ট্র্যাংকুলাইজ করে ভারতীয় লরিতে উঠিয়ে নিয়ে যেতে সমর্থ্য হয়েছে ভারতীয় বন বিভাগ।

এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের লোকালয়ে চলে আসা বন্য হাতি দুটি। এর পর থেকে সীমান্ত দাপিয়ে বেড়ায় হাতি দুটি।

জানা গেছে, গত তিন দিন আগে হাতি দুটো পুর্ব (ভারত) থেকে এসে তেঁতুলিয়া হয়ে সীমান্তের নোম্যানস ল্যান্ডের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছিল। প্রথম দিন একজনের প্রাণহানি ও ফসলের কিছু ক্ষয়-ক্ষতি হলেও দুদিনে কোন ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া যায় নি। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে গত তিন দিনে নির্ঘুম রাত যাপন করতে হয়েছে সবাইকে। এদিকে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দিনভর তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের সীমান্তে ২’শ গজ দূরে ভারতের হাফতিয়াগছ বিএসএফ ক্যাম্প সংলগ্ন ভারতীয় ফরেস্টের জিরো সীমানায় অবস্থান করে হাতি দুটি। এতে রাতভর স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করেতে দেখা যায়। তবে ভোর রাতে আবারো সীমান্ত এলাকার মহানন্দা নদীর পাশ দিয়ে উত্তর কাশিমগঞ্জ ও ফাঁসিদেওয়া সীমান্ত পৌছায় হাতি দুটি।

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি জানান, হাতি দুটি নিজ দেশে ঘোরাফেরা করতে করতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ চলে আসে। গত তিন দিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরেছে এই দুই হাতি, একই সাথে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল এলাকাগুলোতে। আমরা সার্বক্ষণিক মানুষকে সচেতন ও নিরাপদ দূরত্ব থাকার আহব্বান জানিয়েছে। অবশেষে ভারতীয় বন বিভাগ হাতি দুটিকে ট্র্যাংকুলাইজ করে লরিতে উঠিয়ে নিয়ে যেতে সমর্থ্য হয়েছে। আর আমাদের সীমান্ত এলাকায় হাতির আতঙ্ক নেই। তবে এর মাঝে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। কিছু ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি ও একজনের প্রাণহানি হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের রওশনপুর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ৭৩৫/২ এস এর মধ্যবর্তী ইসলামবাগ এলাকা দিয়ে ২টি ভারতীয় বন্য হাতি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরে হাতি দুটি তিরনইহাট এলাকা হয়ে গোয়ালগছ বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্তে কাশিমগঞ্জ এলাকায় এসে অবস্থান নিয়ে তাণ্ডব চালিয়ে কিছু বাড়ি ঘরে হামলা করে এবং সন্ধায় হাতির তাণ্ডবে নুরুজ্জামান (২৩) নামে এক বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু হয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় বিকেলে কাশিমগঞ্জ সীমান্ত এলাকার ৭৩০ পিলারে বাংলাদেশ ও ভারতীয় বনবিভাগের প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধনের জন্য পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পতাকা বৈঠকে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা হাতি দুটি ভারতে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশি বনবিভাগের সদস্যদের সঙ্গে ভারতীয় বনবিভাগ বিভাগের সদস্যদের প্রয়োজনীয় আলোচনা হয়। পরে রাতে গোয়ালগছ ক্যাম্পের বিপরীতে ৭৩০ এর নিকটবর্তী বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ফাঁসিদেওয়া ক্যাম্প এলাকা দিয়ে নদী পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করে হাতি দুটি।

এর মাঝে আবারো হাতি দুটি ভারতের বিভিন্ন এলাকা অতিক্রম করে তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের তেলিপাড়া ও ভারতের হাফতিয়াগছ ফরেস্টের জিরো সীমানায় অবস্থান নিয়ে সব শেষ তৃতীয় দিনে তিরনইহাট ইউনিয়নের উত্তর কাশিমগঞ্জ ও ভারতের ফাঁসিদেওয়া সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নেয়।

এফআর/অননিউজ

আরো দেখুনঃ